মানুষ এক সময় বনে-জঙ্গলে বাস করতো, সভ্যতার আলো তখনও সমাজে পড়েনি। কালের বিবর্তনে তারা আজ সভ্যতার যুগে। বিজ্ঞানের অভাবনীয় কল্যাণে মানুষ প্রতিনিয়তই সভ্যতার নিত্য নতুন অনুসঙ্গের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগে আমরা ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের জগতে পা রাখলাম।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কতটা সভ্য হতে পেরেছি আমরা?
দেশ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যেহারে অবকাঠামোগত কিংবা প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে মানবিক উন্নয়ন সেহারে ঘটছে কিনা?
একটু সজাগ দৃষ্টিপাতে সচেতন সমাজ খুব সহজেই অবলোকন করে থাকবেন প্রতিনিয়তই আমাদের সমাজে এমন কোন না কোন অমানবিক ঘটনা ঘটছেই। যা বিবেককে নাড়া দেয়। শিহরিত করে ঔচিত্যবোধ সম্পন্ন মানুষকে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন মধ্যরাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চার সন্তানের জননীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। বিরোধীদলে ভোট দেয়ায় কিংবা পূর্ব শত্রুতার কারণ যাই হোক না কেন মূখ্য বিষয় হলো স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও মুক্তি মেলেনি মানবতার!
মানুষ আর পশুর মধ্যে মূল যে পার্থক্য কি জানেন? ঔচিত্যবোধ। কোনটা ঠিক আর কোন টা নয় এটা যে বুঝতে পারে সে মানুষ আর যে বুঝতে পারে না সে হলো পশু। আমরা অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব কিংবা কাছের কাউকে ‘অমানুষ’ বলে থাকি। আসলে সত্যিই কি সে মানুষ নয়? অবশ্যই মানুষ তবে জন্ম সূত্রে। আর অমানুষ বলে যে আখ্যা দেয়া হয়েছে তা তার অনৌচিত্য কর্মের ফসল।
আমাদের চারপাশে এমন মানুষরূপী বহু অমানুষ রয়েছে। এটা অস্বাভাবিক নয় তবে এর মাত্রা বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগের। এইতো গত ৭ জানুয়ারী রাজধানীর ডেমরায় লিপস্টিক দেয়ার কথা বলে ২ শিশুকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। আশ্চর্যের বিষয় তাদের দুজনেরই বয়স পাঁচের নিচে। মানুষ কতটা নিচু হলে এহেন কাজ করতে পারে আমার জানা নেই। মানবিকতা-মনুষ্যত্ববোধ শব্দগুলোই যেন আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
২০১৮ সালে জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন সূচকে আমাদের অবস্থান ১৮৯ দেশের মধ্যে ১৩৬তম। যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৩ ধাপ এগিয়েছে। অথচ এখনও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু ধর্ষণ। পরিসংখ্যানে যেখা যায়, সারাদেশে ২০১৬ সালে ৪৪৬ জন, ২০১৭ সালে ৫৯৩ জন আর ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসেই ১৭৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান মোতাবেক গড়ে প্রতিদিন দুজন শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রতিবেদন বিএসএএফএর। ধর্ষণের সর্বশেষ চিত্র যদি বলি, ২০১৯ সালের প্রথম ১২ দিনেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন বয়সের অন্তত ১০ জন ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা, পলিটিক্যাল পাওয়ার প্রাকটিসসহ নানা কারণে যোগ্য যোগ্য শাস্তি বিধান সম্ভব না হওয়ায় এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যা নারী অগ্রযাত্রার পথকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।সুতরাং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড রেখে আইন হতে পারে এমন পৈশাচিক ঘটনার একমাত্র রক্ষাকবচ।
শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা