বোলারের নাম নরেন্দ্র মোদী আর ব্যাটসম্যানের নাম ইমরান খান। বোলিং উইকেটে নরেন্দ্র মোদী বল মারলেন আর ইমরান খান সজোরে হাকিয়ে দিলেন ছক্কা, একেবারে বাউন্ডারী পার। ইমরান খানের জন্য রাজনীতি যেন ক্রিকেট খেলার মত সহজ কাজ। ভারত পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা নিরসনে একজন পাকা খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। চারিদিকে ইমরান খানের প্রশংসা। খোদ ভারতীয়রাও ইমরান খানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভারতের একজন সাবেক বিচারপতি সমালোচক থেকে হয়ে গেলেন ইমরান খানের ভক্ত।
অনেকেই এখন এমনও বলছেন যেন ইমরান খানকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে একটি পিটিশনও দায়ের করা হইয়াছে। সেখানে স্বাক্ষর করেছেন ৩ লক্ষাধিক মানুষ।
কিন্তু ইমরান খান নিজেকে নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনে করেন না। তাঁর নিজের ফলোয়ারদের জানিয়ে দিয়েছেন টুইট করে।

প্রথমেই খেলাটা শুরু করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হানায় ৩০০ এর অধিক জঙ্গি নিহতের খবর। ভারতীয়দের কাছে রীতিমত মহাহিরো হয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। এক জনসভায় ঘোষণা দিলেন “ভারত এখন নিরাপদ”।
রাত পার হতেই পাকিস্তানের জবাব শুরু। ভারতের দুইটি যুদ্ধ বিমান ভুপাতিত করে এবং একজন পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। ব্যস, ভারতে শুরু হয়ে যায় চরম উৎকন্ঠা। সবকিছু চাপিয়ে পাইলট অভিনন্দের আটকই সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। অপরদিকে রয়টার্স, এপি, বিবিসি সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায় পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলায় আহত হয়েছেন মাত্র একজন, কেউ নিহত হয় নি। পাকিস্তানের জনপ্রিয় সাংবাদিক হামিদ মীর ঘটনাস্থলে পৌছে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন ভারতের দাবী সম্পূর্ন মিথ্যা।
আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে নিয়ে ভারতের চরম উৎকন্ঠার মাঝে মহানুভবতার পরিচয় দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ঘোষণা দিলেন শান্তির বার্তা পৌছাতে আটক পাইলটকে মুক্তি দিবেন ইমরান খান। যেই কথা সেই কাজ। কথামত আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দিয়ে দিলেন। ভারতীয়দের উল্লাস শুরু। চারিদিকে ইমরান খান এর প্রশংসা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান, জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস, সৌদি আরব, চীন, যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সবাই প্রশংসা করেছেন ইমরান খানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার।
অপরদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন বিরোধী শিবিরের তোপের মুখে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জানতে চান, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে আদৌ কারও মৃত্যু হয়েছে কিনা। তিনি বলেন, ‘এটাকে বলা হচ্ছে এয়ার স্ট্রাইক। কিন্তু তাতে কতজন মারা গেছে, সেটা জানতে চাই। জওয়ানদের রক্ত নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। কতজন মারা গেছে, কোথায় বোমা মারা হয়েছে আমরা দেখতে চাই। দেশের জন্য আমরা আছি। আমরা শান্তি চাই। ভোটে জেতার জন্য যুদ্ধ চাই না’।
বিজেপি বিরোধী শিবির বিজেপি সরকারের কাছে পাকিস্তানে হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে প্রমাণ চাইলেও বিজেপি সরকার তা দিতে নারাজ।
কিন্তু ভারত বলে কথা। কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় মাঝে একটি আলাদা সেন্টিমেন্ট কাজ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিয়েই ভারতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালান যাতে নির্বাচনে জেতা সহজ হয়ে যায়। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। ইমরান খানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে নরেন্দ্র মোদী স্পষ্টতই পরাজিত। তবে ভারতে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা একেবারেই তলানিতে তা কিন্তু বলা যাবে না।
তাই বলা যায়, ভারত পাকিস্তানের চলমান রাজনীতিতে জিতে গেলেন পাকিস্তানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। নরেন্দ্র মোদীর অবস্থা এখন অনেকটাই ক্রিকেট মাঠে বল করে ছক্কা খাওয়ার মত।
নরেন্দ্র মোদী এখন কি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেন তাই এখন দেখার বিষয়।