ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোপার্জিত স্বাধীনতার (ডাস) দোকান থেকে শতাধিক ক্রিকেট স্টাম্প ও ব্যাট উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার রাত ৮টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা এসব উদ্ধার করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা মিডিয়াকে জানান, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাত ৮টার পর ডাসের দোকানে অভিযান চালায়। এর মধ্যে চারজন সদস্য দোকানের ভেতরে ঢোকেন। তাঁরা ক্রিকেট খেলার শতাধিক স্টাম্প ও ব্যাট উদ্ধার করেন। পরে সেগুলো নিয়ে প্রক্টর অফিসে যান।
দোকানের কর্মচারী পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী এসে বলে যে, গোলাম রাব্বানী (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক) ভাই এগুলো ভেতরে রাখতে বলেছেন। তাই আমরা রাখি। কিন্তু এতে কী আছে তা আমরা জানতাম না।’
প্রক্টরিয়াল টিমের কয়েকজন সদস্য জানান, রাত ৮টার দিকে দোকানে অভিযান চালানোর পর শতাধিক স্টাম্প ও ব্যাট উদ্ধার করেন প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। এ সময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী এসে দোকানে থাকা লোকদের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের কটু কথা বলে। তারা বলেন, এখানে কে রেখেছে তা না জেনে রাব্বানী ভাইয়ের নাম কেন করছ? তখন দোকানে থাকা একজন বলেন, আমরা যা জানি তাই বলছি। এখানে ছাত্ররা যদি কিছু রাখে তবে আমাদের কী করার আছে? তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে থামিয়ে দেন এবং গোলাম রাব্বানীর নাম না নেয়ার নির্দেশ দেন।
ডাকসুর আচরণবিধির ১৪ নম্বর ধারায় আছে নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন চলাকালে বিস্ফোরক, দেশীয় অস্ত্র (লাঠিসোটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি) ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ দেশি অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না।
এদিকে, ডাকসু নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও পোলিং এজেন্ট না রাখার প্রতিবাদে নির্বাচনের আগের দিন রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করেছেন প্রার্থীরা। তাঁরা সাত দফা দাবি জানিয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
দাবিগুলো হলো-১. সবার ভোট গ্রহণের বাস্তব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ভোট গ্রহণের সময় আরো চার ঘণ্টা বাড়ানো; ২. নির্বাচনকেন্দ্রিক শঙ্কা ও ধূম্রজাল নিরসনের লক্ষ্যে সব ধরনের মিডিয়ার কেবল পোলিং বুথের অভ্যন্তর ছাড়া নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্রের সব তথ্য সংগ্রহের অবাধ সুযোগ তৈরি করা; ৩. ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আসতে নিরুৎসাহিত করাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা; ৪. স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগের অনুমতি প্রদান; ৫. নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও ভোটারদের নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ; ৬. প্রতিটি কেন্দ্রে সকাল বেলা ব্যালট পেপার নেওয়া এবং ৭. ভোট গ্রহণের দিন সকাল বেলা সব রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
ছাত্রদল, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বামপন্থীদের প্যানেল প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যসহ বেশ কয়েকটি প্যানেলের প্রার্থীরা রোববার বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করেন। নির্বাচনে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকায় ভোট সুষ্ঠু হবে কি না, সে বিষয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
সূত্র:রেডিও তেহরান, এনটিভি অনলাইন।