২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাসে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ১৯.১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যেখানে মার্চ ২০২৪ শেষে এই ঘাটতি ছিল ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার এবং এপ্রিল ২০২৩-এ ছিল ১৪.৪৪ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ঘাটতির এই বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কিছু চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৫ মে জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.১ শতাংশ বেড়ে ৩৪.৯৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি প্রধানত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক এবং টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানিতে বেড়েছে। অন্যদিকে, আমদানি ১০.২৫ শতাংশ বেড়ে ৫৪.০৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আমদানির এই বৃদ্ধির পিছনে প্রধান কারণ হলো অপরিশোধিত তেল, ইলেকট্রনিক্স এবং স্বর্ণের আমদানি বৃদ্ধি।

ডেটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফিং করার সময়, বাণিজ্য সচিব সুনীল বার্থওয়াল বলেন, এই পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে নতুন অর্থবছরটি একটি ভালো সূচনা করেছে এবং তিনি আশা করেন যে এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও কিছুটা চ্যালেঞ্জিং থাকলেও আমরা আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

মার্চ ২০২৪-এ, বিদেশগামী চালান আগের বছরের ৪১.৯৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৪১.৬৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈশ্বিক চাহিদার কমতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলার সমস্যার কারণে মার্চ মাসে রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে মন্দার কারণে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানির বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো দেশীয় চাহিদার বৃদ্ধি। বিশেষ করে প্রযুক্তি এবং স্বর্ণের মতো পণ্যের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আরও বলছেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক, তবে এটি বাণিজ্য ঘাটতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।”

বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও ভারত তার রপ্তানি বাজারে অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সরকার বিভিন্ন দেশীয় উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারকদের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। বিভিন্ন নীতি এবং উদ্দীপনা প্যাকেজের মাধ্যমে রপ্তানি ক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বৈদ্যুতিক যানবাহন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো খাতে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে আলোচনা চলছে যা ভারতীয় পণ্যের জন্য নতুন বাজার উন্মুক্ত করতে পারে।

ভারতের অর্থনীতি গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক বাজারে মন্দা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও, সরকার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আশাবাদী যে তারা এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রাখতে পারবে।